Friday, September 12, 2014

আখিরাতের জন্য পরিকল্পনা করা

 আখিরাতের জন্য পরিকল্পনা করা


See this video: (2 click)

জানেন, আমরা এটা থেকে কি শিখলাম? কোন কিছুকে বড় করে দেখলেই সেটা বড় ব্যাপার হয়ে যায়। কোন কিছুকে ছোট করে দেখ তাহলেই সেটা সামান্য মনে হবে। জানেন, এই আয়াতে আখিরাতকে বড় এবং দুনিয়াকে ছোট করে দেখানো হয়েছে।পুরো আয়াতটা এটা নিয়েই।



দুনিয়াতে আমরা জীবন যাপন করবো। আমাদের ক্যারিয়ার হবে।আমাদের শিক্ষাগত অর্জন থাকবে।আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই সব কিছুই জীবনে থাকবে।কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানো এই সব কিছু ক্ষণস্থায়ী। সব কিছুই। একদিন আসবে যেদিন এক জমায়েত হবে।এবং সেদিন তারা নামায পড়বে। আর সেদিন তারা একটা ঘোষণা দিবে।যে একটা জানাযা হবে। এবং এই ঘোষণাটা একদিন হবে আমার জন্য এবং একদিন হবে আপনার জন্য। 

এটা হতে যাচ্ছে এবং একদিন মানুষ আমাদের জন্য জানাজার নামায পড়বে। এবং ততক্ষনে আমরা চিরকালের জন্য চলে গেছি। এবং এটা শীঘ্রই ঘটবে, দেরীতে নয়। 

আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের জীবনের অনেকখানি তো ইতোমধ্যেই কেটে গেছে। সুতরাং এমন নয় যে সেই দিনটা থেকে আমরা দূরে যাচ্ছি, বরং আমরা সেই দিনের আরো কাছে পৌছাচ্ছি।

তাই যত তাড়াতাড়ি আমরা এটা আত্মস্থ করি যে, আল্লাহর কাছে যা আছে তা তুলনামূলক ভাবে ভালো। কারন যে কোন ভাবেই হোকনা কেন আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। তাহলে আমরা নিজেরা নিজেদেরই উপকার করব । যদি আমরা শুধু এটা শিখতে পারি যে কিভাবে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হয়। যেমনটা আমি বললাম যে আমরা ১০ বছরের পরিকল্পনা করি, ১৫ বছরের পরিকল্পনা করি।কিন্তু আমরা আখিরাতের কথা চিন্তাই করিনা। তাহলে আখিরাতের কথা কিভাবে ভাবা উচিত? কিভাবে আখিরাতের জন্য বাস্তবতা ভিত্তিক পরিকল্পনা করা যায়? আখিরাতের জন্য আমরা ১০ বছরব্যাপী, ১৫ বছরব্যাপী পরিকল্পনা করিনা।

আমরা এর জন্য দৈনন্দিন পরিকল্পনা করি। এটা দীর্ঘ সময়ব্যাপী লক্ষ্য নির্ধারণ করা নয়। এটা আজকের দিনটা আপনি কিভাবে ব্যয় করলেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট। আপনি তার পরে কি করতে যাচ্ছেন এটা তার সাথে সংশ্লিষ্ট। 
আপনি আগামীকালটা কিভাবে কাটাবেন? 
আপনি কখন ঘুম থেকে উঠবেন? 
আপনি আপনার অবসর সময়ে কি করবেন? 
আপনি কবে আপনার ফোন থেকে ঐ অকাজের গেমগুলো মুছে ফেলবেন? 
কবে আপনি এত বেশিক্ষন টিভি দেখা বন্ধ করবেন? 
কবে বন্ধ করবেন এসব?
আপনি কবে সময় নষ্ট করা বন্ধ করবেন, শুধু চ্যাট করে বা ট্রল করে।
কবে বন্ধ করবেন?

যদি আজকে না হয়, তবে কবে আপনি আপনার জন্য একটি উচ্চতর মান বজায় রাখবেন। আপনি যদি দিনের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন না আনেন। আপনি কখন ঘুমাতে যাবেন, কখন ঘুম থেকে উঠবেন। আপনি যা বলেন এবং আপনি যা করেন। বিশেষত আপনি যেটাকে অবসর সময় বলে মনে করেন সেটাকে কিভাবে ব্যয় করেন। কারন এটা বিনামূল্য নয়। আপনি এখন এটার জন্য কোন মূল্য দিচ্ছেননা, কিন্তু আপনাকে এবং আমাকে আল্লাহর কাছে এর হিসাব দিতে হবে। আমাদেরকে এর জবাবদিহীতা করতে হবে। এই সময়েরও দাম আছে।

আমাদের হয়তো খেয়াল থাকেনা যে আমাদেরকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে, কিন্তু এর হিসাব রাখা হচ্ছে। আপনারা তো জানেন মানুষ যখন ঘড়ির কাঁটা ধরে না চলে তখন তারা কেমন হালকা মেজাজে থাকে। যখন তারা অফিস থেকে বের হয়। কিন্তু ফেরেশতারা ঘড়ি ধরে আমাদের সব সময়ের হিসাব রাখছে। তারা কোন বিরতি নেয়না। এবং যখন তারা বিরতি নেয় তখন তারা অন্যদের তাঁদের দায়িত্ব দিয়ে যায়। জানেন এটা এ কারনেই আমাদের প্রতিদিনের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। তাই কেননা আমরা নিজেদের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি করি । এটা আর কাউকে জানানোর জন্য নয়। এটা শুধু আপনিই জানবেন।

এব্যাপারে আপনি নিজেই আপনার সবচেয়ে কঠিন সমালোচক । আপনাকে আর আমাকেই ঠিক করতে হবে আমরা কিভাবে ভিন্ন রকম জীবনযাপন করব। কারন আল্লাহ্‌র কসম যে মুহূর্তে আমরা বলতে শুরু করবো ...যে আমি তো বেশ ভালোই করছি। আমার জীবনে পরিবর্তন করার কিছু নাই। এটাতো বিভ্রম। অন্য কোন মানুষ হয়তোবা আপনাকে নিজের ব্যাপারে ভুল ধারণা দিয়েছে। তারা আপনাকে দীর্ঘদিন অন্ধকারে রেখেছে। তারা চোখে এতো ধূলা দিয়েছে যে এখন আপনি নিজে কি সেটাও বুঝতে পারেননা।

অনুবাদ করে দিয়েছেনঃ নাশিদ বিনতে তৌহিদ



Thursday, September 11, 2014

Quantum Physicist Robert Lanza Proves There Is an Afterlife [Video]

 Quantum Physicist Robert Lanza Proves There Is an Afterlife [Video]
by Alex Lemieux on February 17, 2014.
Saved under Metaphysical, Quantum Physics, Science


Quantum Physicist Robert Lanza has proven that one of the most fundamental and philosophical questions humans ponder has finally been solved – there is an afterlife. No longer is it the fact that humans are only carbon-based vessels of flesh. No longer is it the fact that humans inhabit the earth for a minute period only to depart life and waste away among the sands of time. There is more to life than the eye can see and the mind can comprehend.
Dr. Robert Lanza is the person to whom the gratitude is owed for this discovery. He is both Chief Scientific Officer of Advanced Cell Technology and Adjunct Professor at the Institute for Regenerative Medicine at the Wake Forest University School of Medicine. If any title is in need of an abbreviation, his would certainly warrant an acronym.
Lanza states that scientists have hitherto thought of life as, “the activity of carbon in an admixture of molecules.” He argues that the notion of consciousness plays a fundamental role in the creation of the universe and all therein. Lanza explains that science considers time and space as physical entities which develops an incorrect understanding for creation and continuing life of the universe.
Physicists have promulgated the understanding that space and time are linear functions. When explained through string theory or, “M theory,” in a 16 dimensional universe there are Planck length points at the one dimensional level called strings or membranes. To get from point to another is going from point A to point B which constitutes a linear function of quantum travel. However, Lanza’s biocentric theories creates a novel methodology which argues that these constraints of the physical world are nothing more than paradigms of our consciousness.


Biocentrism is a cosmological argument that biology created the universe. In this sense, consciousness acts as what Saint Thomas Aquinas called, the first mover, unmoved. Furthermore, Lanza’s hypothesis stems from French philosopher Rene Descartes who created the idea of dualism – the ontological argument of a body that incorporates a mind or consciousness to create a life. In Lanza’s understanding, consciousness created the universe – the afterlife being supported by Lanza’s theory on consciousness through quantum physics.
While this has mainly seemed as a philosophical mind experiment, Lanza can physically prove this metaphysical notion. He used the famous double-slit experiment as an example. He states that when observed, particles will travel through one of the slits like a bullet, parallel to modern physics. However, when someone is not actively watching the experiment, particles travel through both slits at the same time.


The experiment shows that matter has the characteristic of light at the quantum level. When moving through a double slit, particles take on properties of light in wavelengths at the obstacle. The particle then shifts into a quantum superposition and travels through both slits at the same time. Such a quantum phenomenon shows that elements are not what they seem to be and can change based on a person’s perception.
Although Lanza’s experiment warrants a proven hypothesis, an existential argument can be made. If a big bang happens in an ever-expanding vacuum and there are no life forms around to hear it, did it happen?
Lanza states that there is more to the theory than can be perceived. The problem is, however, there do not seem to be lines of communication to entities in the afterlife.  Though, Lanza’s theory can prove that life can transcend the linear construct upon which our understanding of the universe is based. When people cease to exist their essence surpasses the boundaries of the physical world into an inescapable multiverse.
Reception of Lanza’s monumental theory has been mixed across the board. Nevertheless, while some may believe it is a foolhardy notion, Galileo’s denouncement of a geocentric solar system was granted heresy by the Catholic Church centuries ago.
More on this vast cosmological theory and how quantum physics can prove the existence of an afterlife can be found in his book Biocentrism: How Life and Consciousness are the Keys to Understanding the True Nature of the Universe.
By Alex Lemieux

Sources:
Travelers Today
Daily Mail UK
CNET
http://guardianlv.com


Please browse this webaddress:
http://www.afterlifetv.com/



Thursday, September 4, 2014

পরকালের জীবনের প্রমান কি? আলোচনায়: ডাঃ জাকির নায়েক

পরকালের জীবনের প্রমান কি? 
আলোচনায়: ডাঃ জাকির নায়েক


ক. পরকালে আস্থা অন্ধ বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়

অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যান, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসম্মত প্রকৃতির কোনো মানুষ কিভাবে পরকাল বা মৃত্যুর পরে আর একটি জীবনের ওপরে আস্থা রাখতে পারে? তারা ধারণা করে যে, যারা পরকালে আস্থাশীল তাদের যে আস্থা, তা একটি অন্ধ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত।
পরকালে আমার আস্থা সঙ্গত যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
খ. ‘পরকাল’ একটি যৌক্তিক বিশ্বাস
বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি নিয়ে জ্যোতির্ময় কুরআন অন্তত হাজারের ওপরে আয়াত ধারণ করে আছে (এ প্রসঙ্গে আমার বইটি “কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান সুসঙ্গত অথবা অসঙ্গত” দেখা যেতে পারে)। বিগত কয়েক শতাব্দীতে কুরআন বর্ণিত বিজ্ঞানের অসংখ্য বিষয় সত্য বলে প্রমানিত হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান এখনও সে পর্যায়ে গিয়ে পৌছায়নি যাতে কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি বিষয়কে সত্য বলে প্রমান করতে পারে।
কুরআন বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহের ৮০% ইতিমধ্যে শতকরা একশ ভাগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে! বাকি থাকলো মাত্র ২০% ভাগ। এই ২০% ভাগ সম্পর্কে বিজ্ঞানের কাছে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। যেখানে বিজ্ঞানই এখন পর্যন্ত সে পর্যায়ে পৌছাতে পারেনি যাতে কুরআনের এসব বর্ণনাকে সত্য বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করতে পারে, সেখানে সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে আমরা নিশ্চিত করে ঐ ২০% ভাগ অনুদঘাটিত বৈজ্ঞানিক বিষয় সম্পর্কিত কুরআনের একটি আয়াতও ভুল একথা কোনভাবেই বলতে পারিনা।
তাই কুরআনের ৮০% ভাগ যেখানে চূড়ান্তভাবে সত্য বলে প্রমাণিত এবং বাকি ২০% ভাগ শুধু প্রমাণের অপেক্ষায়। সেখানে যৌক্তিকতা এটাই বলবে যে, ঐ ২০% ভাগও বিজ্ঞান যখন আরও উৎকর্ষতা লাভ করবে তখন অবশ্যই সত্য বলে প্রমাণিত হবে। কুরআনে বর্নিত পরকালীন স্থায়ী জীবনের বিষয়টি ঐ ২০% ভাগের অন্তর্ভূক্ত, অনুদ্‌ঘাটিত একটি সত্য। যৌক্তিকতা এখানে তার সত্যতার দিকেই মত দেবে।
গ. ‘পরকাল দর্শণ’ ছাড়া শাস্তি ও মানবীক মূল্যবোধসমূহ সম্পূর্ণ অর্থহীন
ডাকাতি করা ভাল না মন্দ কাজ? ভারসাম্যপূর্ণ সাধারন একজন মানুষও বলবেন, এটা জঘন্য কাজ্‌ পরকালের ভালো-মন্দ যে বিশ্বাস করে না সে কেমন করে একজন শক্তিশালী ও প্রভাবশালী অপরাধীকে বোঝাবে যে, ডাকাতি একটি জঘন্য অপরাধ?
ধরা যাক, পৃথিবীতে আমি একজন শক্তিশালী অপরাধী , একই সাথে আমি একজন বুদ্ধিমান ও যুক্তি পরায়ন মানুষ। আমি বলব ডাকাতি একটি ভালো কাজ কেননা এটা আমাকে বিলাস বহুল জীবন যাপন করার সহায়তা করছে- তাই ডাকাতি আমার জন্য ভালো।
যদি কেউ আমার সামনে উপযুক্ত একটি যুক্তিও দাঁড় করিয়ে দেখাতে পারে যে, ডাকাতি আমার জন্য মন্দ কেন? তাহলে সাথে সাথে একাজ আমি ছেড়ে দেব। মানুষ সাধারণত যে সব যুক্তি সামনে রাখে।

১.কেউ হয়তো বলবে যার সর্বস্ব ডাকাতি হয়ে গেছে সে সে সমস্যায় পড়বে
আমি অবশ্যই তারা সাথে একমত যে, যার ওপর ডাকাতি চালানো হয়েছে তার জন্য এটা মন্দ। কিন্তু এটা আমার জন্য তো ভালো। আমি যদি হাজার ডলার ডাকাতি করে থাকি তাহলে অত্যন্ত আনন্দের সাথে কোনো পাঁচতারা হোটেলে দু’চারবেলা খাবার খেতে পারবো।
২.তোমার ওপরেও কেউ ডাকতি চালাতে পারে
কেউ হয়তো বলবেন একদিন আমার সর্বস্বও ডাকাতি হয়ে যেতে পারে। আমার কাছে থেকে কেউ কিছু কেড়ে নিতে পারবে না। কারন আমি নিজেই অনেক শক্তিশলী। অন্তত শ’খানেক বডিগার্ড আছে আমার । ডাকাতি আমি করি আমার ঘরে কে ডাকাতি করবে?
একজন সাধারণ মানুষের জন্য ডাকাতি একটা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হতে পারে কিন্তু আমার মতো প্রভাবশালী মানুষের জন্য নয়।
৩.পুলিশ তোমাকে গ্রেফতার করতে পারে
কেউ হয়তো বলবেন পুলিশ তোমাকে একদিন ধরে ফেলবে। পুলিশ আমাকে ধরবে না। কারণ পুলিশকে আমি রীতিমতো টাকা দেই। এমনকি শক্তিশালী এক মন্ত্রীকেও আমি বড় বড় চাঁদা দেই। হাঁ এ ব্যাপারে আমি একমত যে, একজন সাধারন মানুষ ডাকাতি করলে সে ধরা পড়ে যেতে পারে এবং তার জন্য সে অবস্থা অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে যাবে। কিন্তু আমার তো এধরণের কোনো ভয়ই নেই। ধরা পড়লেও সাথে সাথে আমি মুক্ত হয়ে যাবে এ গ্যারান্টি আমার আছে।
যুত্তিপূর্ন একটা কারণ কেউ আমাকে দেখাক-কেন এটা আমার জন্য মন্দ এবং কেনই বা এ পেশা আমি ছেড়ে দেব।
৪.কেউ হয়তো বলবেন এটা ফাঁকা পয়সা, কষ্টার্জিত নয়
আমি তার সাথে সম্পুর্ন একমত- এটা খুব সহজে উপার্জিত টাকা। মূলত এটাই তো আসল কারণ যে জন্য আমে ডাকাতি করি। যদি কোনো মানুষের সামনে উপার্জনের দু’টো পথ খোলা থাকে-একটা সহজ আর একটা কঠিন-বুদ্ধিমান যে কোনো মানুষ সহজ পথটাকেই তো বেছে নেবে।

৫. এটা মানবতা বিরোধী
কেউ হয়তো বলবেন এটা মানবতা বিরোধী মানুষের জন্য মানুষের ভাবা উচিৎ। আমি তাদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন করব। মানবতার এ বিধান কে লিখেছে? কেন আমি তা মানতে যাব? এ আইন হতে পারে আবেগ প্রবন অনুভুতিশীল মানুষের জন্য ভালো। কিন্তু আমি সঙ্গত যুক্তি ছাড়া কিছুই মানতে রাজি না- মানুষের ভাবনা আমি ভাবতে যাবো কোন দুঃখে?
৬. এটা চরম স্বার্থপরতা
কেউ হয়তো বলবেন ডাকাতি একটি চরম স্বার্থপরতা। হাঁ একথা মানি, ডাকাতি একটা স্বার্থপর কাজ । তাহলে আমি কি আমার স্বার্থ দেখব না? এটাতো আমাকে আমার জীবন ভোগের উপায় করে দিয়েছে!
১.যুক্তি দিয়ে ডাকাতিকে মন্দ প্রমাণ করা যাবে না
অতঃপর ডাকাতিকে মন্দ কাজ হিসেবে প্রমাণ করার সকল যুক্তি উপস্থাপন ব্যর্থ ও অকার্যকর প্রমানিত হলো। এসব যুক্তির কথা একজন সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারে কিন্তু আমার মতো একজন সবল প্রভাবশালী অপরাধীকে নয়। কোনো বিতর্কই শুধুমাত্র যুত্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। কাজেই পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য অপরাধীর জয়জয়কারে অবাক হবারও কিছু নেই।
একইভাবে প্রতারণা, নারীধর্ষণ ইত্যাদি আমার মতো ব্যক্তির জন্য ভালো হিসেবেই বিবেচিত হবে এবং যৌক্তিতার দিক দিয়ে এমন কোনো কারণ নেই যা আমাকে বোঝাতে পারে যে, এসব কাজ মন্দ।
২. একজন শক্তিধর প্রভাবশালী অপারাধীকেএকজন মুসলিম বুঝিয়ে নমনীয় করতে পারে

এবার একটু অন্যভাবে দেখা যাক। ধরুন আপনি এ পৃথিবীর একজন শক্তিশালী প্রভাবশালী অপরাধী। পুলিশ আপনার বগল তলে। এমনকি দু’চারজন মন্ত্র-মিনিষ্টারও হাতের মুঠোয়। বহু চেলা চামুন্ডা রয়েছে আপনাকে পাহারা দেবার জন্য আর আমি একজন মুসলিম যে আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হবো- ডাকাতি ধর্ষণ, প্রতারণা ইত্যাদি জঘন্য কাজ।
এখন আমি যদি একই যুক্তিতর্ক তার সামনে রাখি একইভাবে সে উত্তর দেবে যেমনটা আগে সে দিয়েছে। একথা সত্যি যে, অপরাধী অত্যন্ত যুক্তিবাদীএবং তার সকল যুক্তি সঠিক। কিন্তু তা কেবল কতখানি সত্য ও সঠিক যখন সে একজন শক্তি ও প্রভাবশালী অপরাধী।
৩. প্রতিটি মানুষ ন্যায় ও সুবিচারের আকাঙ্ক্ষি
এমনকি এ সুবিচার যদি সে অপরের জন্য না চায়-নিজের জন্য তা অবশ্যই আশা করে। শক্তি ও প্রভাবের কারণে অনেকে নেশা করে আর অন্যদের দুঃখ কষ্টের কারণ হয়। এই একই মানুষ ফোঁস করে উঠবে যদি তাদের প্রতি কোনো অবিচার হয়। এধরনের মানুষের অণ্যের দুঃখ-কষ্টের প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকার কারণে তারা ক্ষমতা ও প্রভাবের পূজা করে। এই ক্ষমতা ও প্রভাবের জন্য তারা যে শুধু অন্যের ওপরে অবিচার করতে পারছে তা-ই নয় বরং অন্যে যাতে তাদের প্রতি এই একই আচারণ না করতে পারে তার প্রতিরোধও করছে।
৪. আল্লাহ মহাশক্তিমান এবং ন্যায়পরায়ণ
একজন মুসলমান হিসেবে আমি অপরাধিকে আল্লাহর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে সম্মত করাব যে, এই আল্লাহ তোমার চাইতে অনেক অনেক বেশি শক্তির অধিকারী এবং একই সাথে তিনি ন্যায়পরায়ণও। জ্যেতির্ময় কুরআণ বলছেঃ
নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিচার করেন না (কারো প্রতি) বিন্দু পরিমাণ।

৫. আল্লাহ আমাকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন না?
অপরাধী, যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞান মনস্ক হবার কারণে কুরআনের বিজ্ঞান ও উত্তমতম ও যুক্তিসঙ্গত দলিল প্রমাণ উপস্থাপনের পরে আল্লাহর অস্তিত্ত্বের ব্যাপারে তার কোন আপত্তি থাকল না। এখন সে হয়তো প্রমাণ করে বসবে যে, আল্লাহ শক্তিমান এবং সুবিচারক হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন না।
৬. যারা অবিচার করে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার
প্রতিটি মানুষ, যে কোনো অবিচারের শিকার হয়েছে- তা আর্থিক দিক থেকেই হোক অথবা সামাজিক দিক থেকে- ভূক্তভোগী প্রতিটি মানুষ চাইবে জালিমের শাস্তি হোক। প্রতিটি সাধারণ মানুষের আন্তরিক কামনা, ডাকাত-ধর্ষককে উচিত শিক্ষা দেয়া হোক। যদিও অসংখ্য অপরাধি ধরাও পড়ছে, শাস্তিও পাচ্ছে কিন্তু তার চাইতে আরো অনেক বেশি পরিমাণ মুক্ত থেকে সমাজে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজের ফূর্তিময় বিলাসপূর্ন জীবন যাপন করছে। যদি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির ওপর অবিচার আপতিত হয় এমন একজনের দ্বারা যে তার চাইতেও বেশি শক্তিধর। তখন এই অপরাধিও চাইবে যে, তার প্রতি অবিচারকারীর চরম শাস্তি হোক।
৭. এই জীবন পরকালীন স্থায়ী জীবনের জন্য পরীক্ষার অবকাশ মাত্র
পরকালের অনন্ত জীবনে কৃতকার্যতার সাথে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য জীবনটা একটা পরীক্ষা। জ্যোতির্ময় কুরআন বলছেঃ

যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যেন তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কাজে-কর্মে তোমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম। তিনি তো মহাশক্তিমান ক্ষমা দানকারী। (সূরা আল-মুলকঃ২)
৮. চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ বিচার দিনে
প্রতিটি প্রানকেই মৃত্যুর যাতনা ভোগ করতে হবে এবং অবশ্যই পুরোপুরি ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হবে তাদের পাওনা কেয়ামতের দিন। তখন যে রক্ষা পেলো আগুন থেকে এবং প্রবেশ করতে দেয়া হলো জান্নাতে নিশ্চিতভাবে সে-ই লাভ করলো চূড়ান্ত সফলতা। আর কিছুই নয় এই পৃথিবীর জীবন, শুধু (ক্ষনিকের ) মায়া ও মোহময় আয়োজন। (সূরা আল ইমরানঃ১৮৫)

ভালো মন্দের সবকিছু পরিমাপ করে দেখানো হবে শেষ বিচার দিনে। একজন মানুষের মৃত্যুর পরে তাকে পুনরায় জীবিত করা হবে সর্বকালের সকল মানুষের সাথে শেষ বিচার দিনে। এটা খুবই সম্ভব যে, একজন মানুষ তার প্রাপ্য শাস্তির কিছু অংশ এই পৃথিবীতে পেলো। আর চূড়ান্ত শাস্তি অথবা পুরস্কার সে পাবে পরকালে। বিধাতা প্রতিপালক একজন ডাকাত বা একজন ধর্ষককে পৃথিবীতেই কোনো শাস্তি নাও দিতে পারেন, কিন্তু শেষ বিচার দিনে তাকে অবশ্যই সব কৃতকার্যের হিসেব দিতে হবে এবং সেই স্থায়ী পরকালে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে যে জীবন সেই জীবনে।


৯. মানুষের আইন হিটলারকে কি শাস্তি দিতে পারে?
হিটলার তার ভয়ঙ্কর ত্রাসের শাসনামলে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পুড়িয়ে মেরেছে। এখন পুলিশ যদি তাকে গ্রেফতার করতো তাহলে মানুষের আইন ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাকে কি শাস্তি দিত? সর্বোচ্চ শাস্তি তারা তাকে যা দিতে পারত তাহলো সেই গ্যাস চেম্বারে খোদ হিটলারকে ঢুকিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তাতে তো শুধুমাত্র একজন ইহুদী হত্যার প্রতিশোধ হতো! বাকি যে ৫৯ লক্ষ ৯৯হাজার ৯শ ৯৯জন ইহুদী -তাদের হত্যার প্রতিশোধ কিভাবে হবে?
১০. শুধুমাত্র আল্লাহ পারেন হিটলারকে জাহান্নামে ফেলে ষাটলক্ষ বারের চাইতেও বেশি বার জ্বালাতে
জ্যোতর্ময় কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ

যারা আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছে খুব শিঘ্রই আমরা তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়া যখন পুড়ে গলে যাবে তখন তার বদলে আমরা তাদেরকে নতুন চামড়া দিয়ে দিব যেন তারা আযাবের স্বাদ বুঝতে পারে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহা শক্তিমান মহাজ্ঞানী। (৪:৫৬)

পরকালের অনন্ত জীবনে হিটলারকে একমাত্র আল্লাহই পারেন ষাট লক্ষ বার পুড়ে মরার স্বাদ কেমন তা বুঝিয়ে দিতে।

১১. মানবীয় মূল্যবোধ অথবা ভালো ও মন্দের ধারনা পরকালের নিশ্চিত আস্থা ছাড়া আদৌ কোনো মূল্য রাখে না।
যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করা সত্য এই যে, পরকালে যার দৃঢ় আস্থা নেই, মানবীয় মূল্যবোধ এবং ভালো ও মন্দ কাজের পরিণতি এমন ব্যাক্তির কাছে প্রমাণ করা সম্পূর্ন অসম্ভব-এখানে যে অবিচার , জুলুম অত্যাচার করেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যদি সে ক্ষমতাবান হয়।

Wednesday, December 18, 2013

আখেরাতের ভয়ঃ যা অনিবার্য করে রাষ্ট্রীয় বিপ্লব

আখেরাতের ভয়ঃ যা অনিবার্য করে রাষ্ট্রীয় বিপ্লব
Written by ফিরোজ মাহবুব কামাল

আখেরাতে ভাবনা ও বিনিয়োগ
শুধু পাওয়ার আশাতেই নয়,ভয়েও মানুষ প্রচণ্ড সৃষ্টিশীল ও বিপ্লবী হয়। ঈমানদারের জীবনে তেমনি এক সৃষ্টিশীল ও বিপ্লবী ভূমিকা রাখে আখেরাতের ভয়। সে ভয় মু’মিনকে তাড়িত করে অর্থ,শ্রম,রক্তের বিনিয়োগে। সে তাড়নায় বিপ্লব আসে শুধু ব্যক্তি-জীবনে নয়,বরং সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে। তখন মু’মিনের জানমালের বিনিয়োগের সাথে যোগ হয় মহান আল্লাহতায়ালার বিনিয়োগ। আল্লাহর ফেরেশতাগণ তখন দলবেঁধে জিহাদের ময়দানে হাজির হয়। মুসলিম ইতিহাসে অতীতে সেটি বার বার ঘটেছে। উত্তাল সমুদ্র,ঝড়ো হাওয়া,ক্ষুদ্র পাখি,মশা-মাছি এমনকি প্রানহীন পাথরও তখন আল্লাহর সৈনিকে পরিণত হয়। নমরুদ,ফিরাউন ও আবরাহার বিশাল সেনাবাহিনী বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব সৈনিকদের হাতে। মুসলিম বাহিনী তো এভাবেই অপরাজেয় হয়,এবং বিজয় আসে আল্লাহর দ্বীনের। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদের আমলে শুধু যে আরবের কাফেরদের উপর বিজয় এসেছিল তা নয়,বিজয় এসেছিল রোমান ও পারসিক –এ দুই বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধেও। বিজয়ের কারণ ছিল মহান আল্লাহর সাহায্য। মুসলমানগণ সে সাহায্যের বলেই অতি অল্পসময়ে বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল।



আখেরাতে ভয়শূণ্য ব্যক্তির লক্ষ্য হয় যুগ যুগ বেঁচে থাকায়। এমন ব্যক্তির জীবনের মূল মিশন এবং সেসাথে আমৃত্যু চেষ্টা হয় বেশী বেশী সম্পদের অর্জন,সঞ্চয় এবং ভোগ। আল্লাহর পথে বিনিয়োগ ও কোরবানী তখন অপচয় বা অর্থহীন মনে হয়। এটিই হলো নিরেট সেক্যুলার চেতনা। এ চেতনায় আক্রান্ত হলে মুসলমান আর প্রকৃত মুসলমান থাকে না। তখন বিলুপ্ত হয় আখেরাতের ভয়,এবং কমে যায় আল্লাহর পথে জানমালের সে বিনিয়োগ। অথচ আল্লাহতায়ালার সূন্নত হলো,তিনি নিজের বিনিয়োগের আগে তাঁর পথে জিহাদে বান্দাহর বিনিয়োগটি দেখেন। যেখানে সে বিনিয়োগ নাই,আল্লাহর সাহায্যও সেখানে আসে না। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কি বিজয় সম্ভব? আল্লাহতায়ালা সে সত্যটি সুস্পষ্ট করেছেন এভাবে,“তোমরা যা চাও তা হয় না,আল্লাহরাব্বুল আ’লামীন যা চান সেটিই হয়।”-(সুরা তাকবীর আয়াত ২৯)। আল্লাহর বিনিয়োগ বাড়াতে অতীতের মুসলমানগণ তাই নিজেদের বিনিয়োগটি বাড়িয়েছেন। অথচ আজ  মুসলমানদের অর্থ,শ্রম,মেধা ও রক্তের বিনিয়োগের প্রধান খাতটি আল্লাহর পথে নয়। বরং খরচের সে খাতটি ব্যক্তি স্বার্থ,পারিবারিক স্বার্থ,রাজার স্বার্থ,দলীয় স্বার্থ,গোত্রীয় স্বার্থ,ভাষার স্বার্থ বা দেশের স্বার্থে যুদ্ধ-বিগ্রহ। স্বার্থসিদ্ধির সে রক্তাক্ষয়ী লড়াইয়ে মুসলিম দেশগুলিতে জানমালের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে। জাহিলী যুগে এটিই ছিল কাফেরদের রীতি। অথচ সে জাহিলী রীতিই আজ  ফিরে এসেছে মুসলমানদের মাঝে। ফলে বিজয় নয়,আসছে পরাজয়।এবং গৌরব না বেড়ে বাড়ছে অপমান।

ঈমানদারের জীবনে আখেরাতের ভয় এতই প্রকট যে তাঁর সমগ্র জীবনকে তা উলটপালট করে দেয়। পাল্টে দেয় তাঁর বেঁচে থাকার মূল লক্ষ্য ও এজেণ্ডা। বলে দেয় কোন পথে চলতে হবে। বদলিয়ে দেয় জীবনের গতিপথ। তাঁর কর্ম,চরিত্র ও চেতনায় আনে এক নতুন বিন্যাস। আরবী ভাষায় সে উলোটপালটকে বলা হল ইনকিলাব বা বিপ্লব। তাই ইসলাম কবুলের সাথে সাথে প্রচণ্ড বিপ্লব এসেছিল আরব মুসলমানদের জীবনে। মুর্তিপুজা ছেড়ে তারা যে শুধু নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের পথ ধরেছে তা নয়,বরং পাল্টে গেছে তাদের রুচী,পানাহার,পোষাক-পরিচ্ছদ,সামাজিক প্রথা,রাজনীতি,অর্থনীতিসহ সবকিছু।তাই সমাজ থেকে মদ্,জুয়া,অশ্লিলতা,সূদ,দাসপ্রথা,শিশুহত্যা,ভ্রুনহত্যা,সন্ত্রাস,চুরিডাকাতি,লুন্ঠন যেমন বিলুপ্ত হয়েছে,তেমনি বিলুপ্ত হয়েছে বর্ণবাদ,সামন্ত্রবাদ ও রাজতন্ত্র। মুসলিম শিশু তখন শুধু নামাযী ও রোযাদার রূপে বেড়ে উঠেনি,গড়ে উঠেছে সার্বক্ষণিক মুজাহিদ রূপে। কিন্তু যখনই সে ভয়ে ভাটা পড়েছে তখনই মুসলমানদের জীবনে ধীরে ধীরে পুরনো জাহিলীয়াতও ফিরে এসেছে। আগুন থাকলে উত্তাপ থাকবেই। তেমনি আখেরাতের ভয় থাকলে মু’মিনের জীবনে বিপ্লবও আসে।সে বিপ্লবের ফলে জিহাদও আসে।সে জিহাদে জান-মালের বিপুল কোরবানীও আসে। প্রবল প্লাবনের পানি যেমন নদীনালা,মাঠঘাট,গ্রামগঞ্জ সর্বত্র প্লাবিত করে,ইসলামের প্লাবনও তেমনি প্লাবিত করে মানব জীবনের প্রতিটি অঙ্গন।সে প্লাবন তখন মসজিদ-মাদ্রাসায় আটকা থাকে না।রাজনীতি, অর্থনীতি,শিক্ষা-সংস্কৃতির ন্যায় কোন অঙ্গণই তখন ইসলামের প্লাবন থেকে বাদ পড়ে না।

কিন্তু আখেরাতের ভয় লোপ পেলে,থেমে যায় ইসলামের সে কাঙ্খিত বিপ্লব। ভাটার পানির ন্যায় ইসলামের জোয়ারও তখন দ্রুত নীচে নামতে থাকে। মুসলিম দেশের রাজনীতি,অর্থনীতি,সংস্কৃতি ও আইন-আদালত থেকে ইসলামের জোয়ার তো সে কারণেই নেমে গেছে। বরং এসেছে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জোয়ার।সে জোয়ারে ভেসে গেছে শুধু মুসলিম দেশের রাজনীতি,অর্থনীতি,সংস্কৃতি,আইন-আদালতই নয়,এমনকি ধর্মকর্মও।এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কুফরি ব্যবস্থা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী যারা বিচার-ফয়সালা করে না তারা কাফের ..তারা যালিম .. তারা ফাসেক। -(সুরা মায়েদা ৪৪ -৪৭)। মুসলমান হওয়ার অর্থ তাই শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত পালন নয়,আল্লাহর আইন তথা শরিয়তের পূর্ণ অনুসারি হওয়া। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আদালতেও কোরআনী বিধানের প্রতিষ্ঠা দেয়া। মুসলমানের জিহাদ তো শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জিহাদ। তাই কোন সমাজে আখেরাতের ভয় কতটা বেঁচে আছে সেটি যাচায়ে বড় রকমের গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। সেটি সঠিক ভাবে ধরা পড়ে সে সমাজে ও রাষ্ট্রে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দেখে, আর শরিয়ত প্রতিষ্ঠিত না থাকলে সেটির প্রতিষ্ঠায় জিহাদের আয়োজন দেখে।

ঈমানদারদের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি হলো জান্নাত। সেটি অনন্ত অসীম কালের জন্য। তবে সে পুরস্কারটি শুধু কালেমা পাঠে জোটে না। ইবাদতকে শুধু নামায-রোযা ও হজ-যাকাতে সীমাবদ্ধ রাখলেও জোটে না। সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কারটির জন্য কোরবানীটিও সবচেয়ে বড় হতে হয়। মহান আল্লাহতায়ালা সে সত্যটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এভাবেঃ “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো,এমনিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তোমাদের পরীক্ষা করা হবে না? অথচ তোমাদের পূর্বের লোকদের পরীক্ষা করা হয়েছে এবং অবশ্যই আল্লাহতায়ালা জেনে নিয়েছেন ঈমানের দাবীতে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী।”–(সুরা আনকাবুত আয়াত ২)। ঈমানের দাবীতে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী -মু’মিনের জীবনে সে পরীক্ষাটি তাই পদে পদে হয়।তবে চুড়ান্ত পরীক্ষাটি হয় মূলত জিহাদের ময়দানে। এ পরীক্ষার ময়দানে ধর্মকর্মের নামে নিজের পছন্দমত কোন আমল বেছে নেয়ার কোন সুযোগ নাই। আল্লাহর দরবারে সব নেক-আমল  সম-মানের নয়। দূর-দূরান্ত থেকে আগত পিপাসার্ত হাজিদের পানি পান করানো নিসন্দেহে নেক আমল।। নেক আমল আল্লাহর পবিত্র ঘরের খেদমতও। কিন্তু সে কর্মগুলি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সমকক্ষতা পায় না। মহান আল্লাহতায়ালা সে বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন এভাবে,“তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে হাজীদের পান করানো এবং ক্বাবা শরিফের খেদমত সে ব্যক্তির সমান যে আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ঈমান আনলো এবং জিহাদ করলো আল্লাহর রাস্তায়? আল্লাহর কাছে এ দুটি কাজ সমান নয়। আল্লাহ যালেম কাওমকে সৎপথ দেখান না। যারা ঈমান আনে,হিজরত করে এবং নিজেদের জানমাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। এবং তারাই সফলকাম। তাদের প্রভূ তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের -যেখানে রয়েছে তাদের জন্য স্থায়ী সুখশান্তি।সেখানে তারা চিরস্থায়ী থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের বদলে কুফরিকে প্রশ্রয় দেয়,তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গ গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে তারাই যালিম। বল (হে মুহাম্মদ)!তোমাদের পিতা,তোমাদের সন্তান,তোমাদের ভাই,তোমাদের পত্নী,তোমাদের স্বগোষ্ঠী,তোমাদের অর্জিত সম্পদ,তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার তোমরা আশংকা করো,তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা ভালবাস –এসব যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ,আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ থেকে তোমাদের কাছে প্রিয়তর হয় তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর ফয়সালা না আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সত্যপথ দেখান না।” -(সুরা তাওবা আয়াত ১৯-২৪)। প্রশ্ন হলো,কোরআনের এ বানীর উপর বিশ্বাস রেখে যখন কোন জনগোষ্ঠি বেড়ে উঠে, তারা কি দূরে থাকতে পারে জিহাদের ময়দান থেকে? অবহেলা দেখাতে পারে শরিয়তের প্রতিষ্ঠায়? সেটি হলে তো মুসলমান হওয়া এবং আখেরাতে জান্নাত পাওয়ার সকল সম্ভাবনাই তো ব্যর্থ হয়ে যায়।

অনিবার্য জিহাদ
মু’মিনের জীবনে মূল এজেণ্ডাটি কি? ঈমানের পরীক্ষাটিই বা কীরূপে? কীরূপে আল্লাহর করুণাপ্রাপ্তি? জান্নাতপ্রাপ্তি এবং প্রকৃত সাফল্যই বা কীভাবে? আল্লাহর ক্রোধ এবং আযাবই বা কীরূপে জুটে? মুসলমানদের মাঝে এ প্রশ্নগুলো অতি সনাতন। কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়েছে রয়েছে প্রচণ্ড অবহেলা,অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি। সে অজ্ঞতা ও অবহেলার থেকে জন্ম নিয়েছে ইবাদত ও নেক আমলের নামে নানারূপ বিভ্রান্তি। সিরাতুল মোস্তাকিম থেকে বিচ্যুত করতে ধর্মের নামে যেমন নানা মিথ্যা পথ আবিস্কৃত হয়েছে,তেমনি জিহাদ থেকে দূরে হঠাতেও নানা কর্মকে পূর্ণকর্ম রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে।

ঈমানদার হওয়ার অর্থ শুধু আল্লাহ ও তার দ্বীনকে বিশ্বাস করা নয়,বরং সে বিশ্বাসক কর্মে পরিণত করা। সেটি না হলে বিশ্বাসের কোন মূল্য থাকে না। এবং সেটি ঘটে মহান আল্লাহর এজেণ্ডা পূরণে তাঁর অনুগত খলিফা হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। আল্লাহতায়ালার নিজের ভাষায় সে এজেণ্ডাটি হলো “লিউযহিরাহু আলাদ্দিনি কুল্লিহী” অর্থঃ সকল ধর্মের উপর তাঁর নিজ ধর্ম ইসলামকে বিজয়ী করা। দ্বীনের এমন বিজয় হলো আল্লাহতায়ালার ভিশন। ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো আল্লাহর সে ভিশনের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়া। ফলে মুমিনের জীবনে ঈমান একাকী আসে না,সাথে আনে আল্লাহর ইচ্ছাপূরণে আপোষহীন জিহাদ। সে জিহাদ ভাষা,বর্ণ,ভূগোল বা গোত্র দ্বারা সীমিত হয় না, বরং তা বিশ্বময়ী হয়। এমন জিহাদে সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা পাল্টে গেল সেটি মূল বিষয় নয়,সমাজ ও রাষ্ট্র পাল্টে না গেলেও তাতে পাল্টে যায় সে জিহাদে অংশগ্রহনকারি মোজাহিদের নিজের জীবন ও জগত। এবং কতটা পাল্টে গেল তার উপর ভিত্তি করে জান্নাত মিলবে। এমন একটি আমৃত্যু জিহাদ গড়ে উঠেছিল প্রতিটি সাহাবীর জীবনে। সে জিহাদে তারা নিজেরা যেমন বদলে গেছেন,সে সাথে পাল্টিয়ে দিয়েছেন আরবের জাহেলী সমাজকে। মু’মিনের নিজ জীবনের বিপ্লব আর রাষ্ট্রীয় বিপ্লব তখন একত্রে এগিয়ে চলে। পুরাতন জাহিলী সমাজের বদলে সাহাবগণ তাই সম্পূর্ণ নতুন ধরণের সমাজ,সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র গড়েছিলেন। সে বিপ্লবের ঝাণ্ডা নিয়ে তারা নানা দেশের নানা জনপদে ঘুরেছেন।

কোরআন শুধু মানব জীবনের টার্গেটটিই নির্ধারণ করে দেয় না,সে টার্গেটে পৌছার পথও দেখিয়ে দেয়।এ পথে চলা পূ্র্ববর্তী যাত্রীদের ইতিহাসও বলে। সে টার্গেটটি হলো জান্নাত। বস্তুত মু’মিনের জীবনে পথচলার মূল রূপরেখাটি নির্ধারিত হয় জান্নাত পাওয়ার সে বাসনা থেকে। জান্নাতে পৌঁছার পথে পরীক্ষা যে কঠিন ও লাগাতর পবিত্র কোরআন সে হুশিয়ারিটিও শোনায়। যেমন বলা হয়েছে,“তোমরা কি এমন ধারণা করে বসেছো,এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ সে অবস্থা তোমাদের উপর এখনও আসেনি যা এসেছিল তোমাদের পূর্বে যারা অতীত হয়েছে তাদের উপর। তাদের উপর এসেছিল এমন (কঠোর)বিপদ ও কষ্ট, তাতে রাসূল এবং তাঁর উপর যারা ঈমান এনেছিল তাঁরা এতটাই শিহরিত হয়েছিল যে তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছিল,“কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য?” তোমরা শুনে নাও,আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী।”–(সুরা বাকারা আয়াত ২১৪)। আল্লাহতায়ালার যে হুশিয়ারিটি উপরুক্ত আয়াতে সুস্পষ্ট তা হলো,ঈমান এনেছি,নামায-রোযা নিয়মিত করি,হজ-যাকাতও পালন করি -শুধু এ টুকুতেই পরকালে সাফল্য জুটবে না।জান্নাতও মিলবে না। সে জন্য তাকে লাগাতর পরীক্ষা দিতে হবে এবং সেসব পরীক্ষায় পাশও করতে হবে। সে পরীক্ষা থেকে পাশ কাটানোর কোন রাস্তা নেই। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণও সে পরীক্ষার মধ্য দিয়েই অগ্রসর হতে হয়েছে।


স্ট্রাটেজী মহান আল্লাহর
অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো,ইসলামের বিজয় আনতে মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব স্ট্রাটেজীটি কি? নবীজী (সাঃ) ইসলামী বিপ্লবের সফল নেতা হলেও তিনি এ বিপ্লবের উদ্ভাবক বা আবিস্কারক নন।বরং মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এ বিপ্লবের মূল স্ট্রাটেজী ও নির্দেশনা এসেছে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। নবীজী (সাঃ) সে স্ট্রাটেজীর একনিষ্ঠ অনুসারী মাত্র। মানুষের সামনে কখন কি বলতে হবে,কোন বিষয়কে কখন গুরুত্ব দিতে হবে, ইসলামের প্রসারে কতদিন গোপনে কাজ চালাতে হবে,দাওয়াত কখন প্রকাশ্যে দিতে হবে,কখন নামায,রোযা ও হজ শুরু করতে হবে,কখন হিজরত এবং কখন জিহাদ শুরু করতে হবে –এরূপ নানা জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলিও নবীজী (সাঃ)র নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিল না,সেগুলি এসেছিল মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। সে নির্দেশগুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে পবিত্র কোরআনে। কোরআন তাই শুধু ইবাদতের গাইড বুক নয়,বরং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের গাইডবুকও। নবীজী (সাঃ)র মৃত্যু হয়েছে। তার সাহাবাগণও চলে গেছেন। কিন্তু যে কোরআন তাদেরকে মহামানব রূপে বেড়ে উঠার পথ দেখালো -সে কোরআন আজ ও অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান। মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তেল,গ্যাস বা অন্য কোন সম্পদ নয়,বরং এই কোরআন। এ কোরআনই তাদেরকে নিঃস্ব অবস্থা থেকে বিশ্বশক্তির মর্যাদা দিয়েছিল। কোরআনে প্রদর্শিত এ পথটা হলো সিরাতুল মোস্তাকীম। একমাত্র এ পথটিই সংযোগ গড়ে পার্থিব জীবনের সাথে জান্নাতের। আখেরাতে যারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চায় তাদের সামনে আজও  কি এ ছাড়া ভিন্ন পথ আছে?

আজকের মুসলমানদের বড় ব্যর্থতা,তারা ব্যর্থ হয়েছে মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালার দেয়া গাইডবুক অনুসরণ করায়। গৃহ নির্মানের ছাদ দিয়ে শুরু করা যায় না।প্রথমে ভিঁত গাঁথতে হয়। তেমনি ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানের প্রকল্পটি শুরু হয় উচ্চমানের মানুষ গড়ার মধ্য দিয়ে। আর সে উচ্চমানের মানুষ গড়ার মূল উপকরণটি হলো আখেরাতে ভয়। আখেরাতের ভয়শূণ্য মানুষ তাজমহল গড়তে পারে। পিরামিডও গড়তে পারে। সাহিত্যে বা বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজও পেতে পারে। বড় বড় রাজনৈতীক দল ও ক্যাডার বাহিনীও গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু সে পথে প্রকৃত ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠা কি সম্ভব? মানুষের মাঝে আখেরাতের জবাবদেহীতার ভয় না গড়ে ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানের প্রচেষ্ঠা অনেকটা ভিত না গড়ে প্রাসাদ গড়ার ন্যায়। বহু দেশে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

নবীজী (সাঃ)তাই তাঁর নবুয়তী জীবনের প্রথম ১৩টি বছর দিবারাত্রি খেটেছেন আখেরাতের ভয়পূর্ণ মানুষ গড়ে তোলার কাজে। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত এটিই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজী। সে স্ট্রাটেজী ধ্বণিত হয়েছে মক্কায় নাযিলকৃত সুরা গুলির মাঝে। সে সময়ে নাযিলকৃত ওহীগুলোর মূল জোর ছিল আখেরাতের ভয়। খোদ নবীজী(সাঃ)কে আখেরাতের আয়োজন দেখাতে মিরাজে তুলে নেয়া হয়। অন্যকোন নবীরাসূলের সে সৌভাগ্য হয়নি। ফলে এতদিন যা ছিল ইলমুল ইয়াকীন তথা বিশ্বাসলব্ধ জ্ঞান,তা পরিণত হয় ইলমুল আ’’য়ীন তথা স্বচক্ষে দর্শনলব্ধ জ্ঞান। তাই আখেরাতের জ্ঞান ও আখেরাতের ভয় –এ দুটিতে নবীজী(সাঃ) ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ। ফলে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ঈমানের গভীরতাতেও। আখেরাতের সে ভয়কেই নবীজী(সাঃ) তাঁর সাহাবাদের মাঝে জাগিয়ে তুলতে আজীবন চেষ্ঠা করেছেন। নবীজী (সাঃ) সে চেষ্টায় সফলও হয়েছিলেন। ফলে সে সময় গড়ে উঠেছিল আল্লাহর শ্রেষ্ঠ মহামানবদের বিশাল বাহিনী।তারা সদাপ্রস্তুত ছিলেন আল্লাহর রাস্তায় সর্বস্ব কোরবানীতে। কোন যুদ্ধের প্রাক্কালে মূস (সাঃ)এর সাহাবাদের ন্যায় তারা একথা কখনো বলেননি,“যান আপনি এবং আপনার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করেন,আমরা অপেক্ষায় রইলাম।”

মুসলিম দেশগুলির আজকের সমস্যাগুলো যতটা না অর্থনৈতীক,সামাজিক বা রাজনৈতীক,তার চেয়ে বহুগুণ নৈতীক। নৈতীক সমস্যা থেকেই জন্ম নিয়েছে অন্যান্য সমস্যা। আর এ নৈতীক সমস্যাগুলোকে সৃষ্টি হয়েছে আখেরাতের ভয় বিলুপ্তির ফলে। আল্লাহর উপর বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও আরবের কাফেরগণ দূর্নীতিতে ডুবেছে। কারণ তাদের ছিল না আখেরাতের ভয়। আখেরাতের ভয় বিলুপ্তির লক্ষ্যে মুসলিম দেশগুলিতে শয়তানী প্রজেক্ট যেমন বহু,এজেন্টও অগণিত। এ ক্ষেত্রটিতেই শয়তানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এ লক্ষে মুসলিম দেশে বহু কাফের রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগও বিপুল। তবে ইসলামপূর্ব জাহিলী আরব সমাজও একই রূপ জটিল নৈতীক ব্যাধীতে রুগ্ন ছিল। মদ্যপান,উলঙ্গতা,অশ্লিলতা,ব্যাভিচার,সন্ত্রাস,চুরি-ডাকাতি,যুদ্ধ-বিগ্রহ ও গোত্রীয় স্বৈরাচারে আচ্ছন্ন ছিল সমগ্র আরবভূমি। সেখানে রাষ্ট্র বলে কিছু ছিল না। ছিল সামন্ত নেতাদের সীমাহীন স্বৈরাচার। কিন্তু সেখানেও বিপ্লব এসেছিল। বরং অনুষ্ঠিত হয়েছিল মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লব। নৈতীক সে অসুস্থ্যতা থেকে আরবগণ যে শুধু সুস্থ্যতা পেয়েছিল তা নয়,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতারও জন্ম দিয়েছিল। মানব পরিণত হয়েছিল মহামানবে। পেয়েছিল ন্যায়-অন্যায়,পাপ-পূর্ণ,হক-বাতিল চেনার মানদণ্ড। আল্লাহর বিধান যে অতি অসুস্থ্য সমাজকেও সুস্থ্য ও মহীয়ান করতে পারে – এ হলো তার ঐতিহাসিক প্রমাণ।


গড়ে উঠে সমৃদ্ধ সভ্যতা
ইসলাম যে শুধু পরকালে জান্নাত দেয় তা নয়। সুখ-সমৃদ্ধি আনে ইহকালের জীবনেও। গড়ে তোলে শ্রেষ্ঠতম সভ্যতা। কিন্তু সেটি কীরূপে? সে সুখ-সমৃদ্ধি ও অনাবিল শান্তি আসে চারিত্রিক বা নৈতীক উন্নয়নের মাধ্যমে। স্রেফ আর্থিক পুঁজি ও সম্পদের প্রাচুর্যে সমাজে সে সমৃদ্ধি আসে না। এ কাজে অতি অপরিহার্য হলো নৈতীক পুঁজি। অর্থনীতির ভাষায় এটিকে বলা হয় সোসাল ক্যাপিটাল।মানবোন্নয়ন এজন্য জরুরী।আর মানবোন্নয়নের জন্য চাই চারিত্রিক উন্নয়ন। আর সে চারিত্রিক উন্নয়নটি আসে আখেরাতের জবাবদেহীতা থেকে। আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয়ের কারণে ঈমানদার ব্যক্তির সামনে অন্যের কোটি টাকা পড়ে থাকলেও সে পকেটে তুলে না। কারণ সে জানে,সে টাকা পকেটে তুলাতে আখেরাতে জান্নাত হারাবে। এবং পৌঁছতে হবে জাহান্নামে। তখন যে শাস্তি জুটবে,হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েও তা থেকে মুক্তি মিলবে না। আখেরাতের সে ভয়ে চুরির মধ্য দিয়ে ধনি না হয়ে বরং দরিদ্র থাকাকেই সে প্রাধান্য দিবে। মু’মিন ব্যক্তি তো এভাবেই নিজের খায়েশের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক পুলিশে পরিণত হয়। সে তখন শুধু নিজের সম্পদের নয়,অন্যের ও রাষ্ট্রের সম্পদের পাহারাদার হয়। এমন চরিত্রবান মানবদের দিয়ে রাষ্ট্রে গড়ে উঠে সমৃদ্ধ সামাজিক পুঁজি বা সোসাল ক্যাপিটাল।

আখেরাতের ভয়ের বিস্ময়কর সৃষ্টি ক্ষমতা হলো ব্যক্তির জীবনে ভ্যালুএ্যাড বা মূল্য-সংযোজনে। কোন দেশে সবচেয়ে বেশী ভ্যালুএ্যাড বা মূল্য-সংযোজনটি সে দেশের সোনা-রূপা,হিরা-জহরত, খনিজ সম্পদ বা পশুসম্পদের গায়ে হয় না। গরুছাগল মোটা-তাজা করে,সোনারূপা দিয়ে গহনা বানিয়ে বা খাম তেল শোধিত করে বিপুল মূল্য সংযোজন করা যায়,আর্থিক মুনাফাও অর্জিত হয়।কিন্তু তাতে জান্নাত জুটে না। সেটি হয় মানবসৃষ্টিতে মূল্য বাড়িয়ে। সে কাজটি করতে বিশাল পুঁজি বা উন্নত প্রযুক্তি লাগে না। সেটি সম্ভব এমন কি জীর্ণ কুঠিরেও। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), হযরত ঈসা (আঃ)ও হযরত মূসা (আঃ)র ন্যায় রাসূলগণই শুধু নয়,মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠমানুষগুলোও তো গড়ে উঠেছে জীর্ণ কুঠিরেই। সে কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ওহীর জ্ঞান বা কোরআনী জ্ঞান। আর সে কোরআনী জ্ঞানের সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান হলো আখেরাতের ভয়। মানবগর্ভে জন্ম নেয়ার কারণেই কেউ মহামানব রূপে বেড়ে উঠে না। বরং নিকৃষ্ট পশুর চেয়েও সে নিকৃষ্টতর হতে পারে। মানবিক গুণের বিপ্লবটি আসে আখেরাতের ভয়ে। মানব জীবনের এটিই সবচেয়ে বড় বিপ্লব। মানব তখন আশরাফুল মাখলুকাত বা শ্রেষ্ঠসৃষ্টিতে পরিণত হয়। মহান মানবিক সভ্যতা গড়ে উঠে তো এমন মহা মানবদের দিয়েই।

নবীজী (সাঃ)র সময় মুসলিম বিশ্বে আজকের মত শত শত বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। তখন মানব জীবনে মূল্য সংযোজনের সে কাজটি হয়েছে পরিবারে ও মসজিদ-মাদ্রাসা। ফলে সে কালে কয়েক লাখ মুসলমানদের মাঝে যত মহামানব গড়ে উঠেছে এবং তাদের হাতে যে মাপের সভ্যতা ও বিশ্বশক্তি গড়ে উঠেছে,আজকের দেড়শত মুসলমানগণ সেটি কল্পনাও করতে পারে না। কারণ মুসলিম দেশগুলোতে আজ হচ্ছে উল্টোটি। হচ্ছে মানব গুণের বিনাশ। সেটি যেমন পরিবারে তেমনি নানা প্রতিষ্ঠানে। এক্ষেত্রে উজ্বল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশ। দেশটির গ্রাম থেকে নিরীহ ছাত্রকে তুলে নিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদেরকে পেশাদার চোরডাকাত,সন্ত্রাসী,মদ্যপায়ী,ব্যাভিচারি ও ধর্ষণকারিতে পরিণত করা হচ্ছে। সেটি আখেরাতে জবাদহীতার ভয় লোপ করে। সেক্যুলারিজম এ নাশকতায় বিশাল রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার। দেশের পুলিশ বিভাগ,শিক্ষাবিভাগ,রাজনীতি,আইন-আদালত,ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রশাসন পূর্ণ হয়ে গেছে মানবরূপী অমানুষদের দিয়ে। দেশ তাই বিশ্বমাঝে বারবার দুর্বৃত্তিতে রেকর্ড গড়ছে। যারা এ বিনাশী প্রক্রিয়া থেকে কোন মত প্রাণ বাঁচিয়ে আছে তার সে সামর্থটি পেয়েছে নিজেদের চেষ্টায়,সেক্যুলার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারণে নয়।


ইসলামের রাষ্ট্রবিপ্লব কেন অপরিহার্য?
আখেরাতের ভয়শূণ্যতায় সেক্যুলার মানুষগুলো যে জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও ভয়ংকর জীবে পরিণত হয় সে প্রমাণ কি কম? মানবরূপী এ জীবগুলিই দু’টি বিশ্বযুদ্ধে ৭ কোটির বেশী মানুষকে হত্যা করেছিল। যাদের নেতৃত্বে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ দুটি হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল তাদের কেউ মুর্খ ছিল না। ছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রিধারি। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জীবন থেকে আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় ছিনিয়ে নিয়ে হিংস্র দানবে পরিণত করেছিল। মুর্খ হালাকু-চেঙ্গিজের গণহত্যা তাদের কুকর্মের তুলনায় অতি তুচ্ছ। যারা জনপদে এ্যাটম বোমা ফেলতে পারে তাদেরকে পশু বললে পশুর অবমাননা হয়। এতবড় ক্ষতি কোন পশু করেনি। মানুষের উপর ভ্যালুএ্যাডের কোরআনী প্রক্রিয়াটি কাজ না করলে মানবসৃষ্টি যে কতটা নাশকতা ঘটাতে পারে এ হলো তার প্রমাণ।গাড়ীতে ব্রেক না থাকলে সে গাড়ী দুর্ঘটনা ঘটাবেই। আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় তেমনি ব্রেকের কাজ করে। কর্ম,আচরণ ও বিবাদে কোথায় থামতে হবে সেটি জানিয়ে দেয়। কিন্তু যার মধ্যে সে ভয় নেই তারে জীবনে সে ব্রেক বা বাধানিষেধও নাই। তখন রাজনীতিতে সে স্বৈরাচারি,অর্থনীতিতে শোষক,সংস্কৃতিতে অশ্লিল এবং ধর্মপালনে সে চরম ভন্ড হয়।যুদ্ধকে এমন ব্যক্তিরাই গণহত্যার হাতিয়ারে পরিণত করে।ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ,পুঁজিবাদ,জাতিয়তাবাদ,বর্নবাদ,ফ্যাসীবাদ,সমকামিতা,ভ্রণহত্যার ন্যায় পাপকর্মে পাশ্চাত্যে যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সেটি তো মূলত আখেরাতের ভয় বিলুপ্ত হওয়ার ফলে।আখেরাতে ভয় বিলুপ্তির অর্থ বিবেক ও ন্যায়পরায়নতার মৃত্যু। এমন মৃত বিবেকের মানুষের দেহে কি আর মানবিক গুণ বাড়ানো যায়? ফাউন্ডেশন ধ্বসিয়ে দেলে পুরা প্রাসাদ ধ্বসে পড়ে,তেমনি আখেরাতের ভয় ধ্বসিয়ে দিলে ধ্বসে পড়ে মানবতাও।

পবিত্র কোরআন কৃষি,শিল্প বা বিজ্ঞান শেখাতে নাযিল হয়নি। বরং নাযিল হয়েছে মানব চরিত্রে কিভাবে ভ্যালুএ্যাড বা মূল্যসংযোজন করা যায় সেটি শেখাতে। অর্থাৎ মানবকে মহামানব করতে। সাহাবাগণ তাই প্রাসাদ গড়ায় বা সৌধ গড়ায় ইতিহাস গড়েননি। ইতিহাস গড়েছেন মহামানব গড়ায়। ফলে সে আমলে যত মহামানব গড়ে উঠেছে সমগ্র মানব ইতিহাসে তা হয়নি। মাথা টানলে কান-নাক-মুখ-চোখ সবই এক সাথে আসে,তেমনি মানব-উন্নয়ন হলে অন্যসব খাতেও বিপুল উন্নয়ন আসে। ইসলামি বিপ্লবের দেশে নৈতীক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব তো এভাবেই অনিবার্য হয়। ফলে অর্থনৈতীক প্রগতির সাথে আসে সামাজিক শান্তি। অপর দিকে মানব-উন্নয়ন না হলে চরম দৈন্যতা দেখা যায় চারিত্রিক বা সামাজিক সম্পদে। তখন বাড়ে দুর্বৃত্ত মানুষের সংখ্যা। তখন আবিস্কৃত হয় মানববিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র,বায়োলজিক অস্ত্র,রাসায়নিক অস্ত্র,দূরপাল্লার মিজাইল,ইত্যাদী। বাড়ে এডস। ফলে ক্ষমতা বাড়ে ধ্বংসকারিতায়।আখেরাতে ভয়শূণ্য হওয়ার বিপদগুলি এভাবেই নানা রূপে দেখা দেয়। আল্লাহর নানারূপ আযাবও তখন ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। মু’মিন মাত্রই সে আযাব থেকে মুক্তি চায়। মুক্তি দিতে চান মহান আল্লাহও। আর মুক্তির সে পথটি হলো ইসলামী রাষ্ট্র বিপ্লবের পথ। নবীজী (সাঃ) ও তার সাহাবায়ে কেরাম তো সে কারণেই ইসলামি রাষ্ট্র গড়েছিলেন। আল্লাহতায়ালা তো সেজন্যই তার প্রতিরাষ্ট্রে ইসলামের বিজয় চান। সাহাবায়ে কেরামের জানমালের সবচেয়ে বড় কোরবানী হয়েছিল সে খাতে।প্রশ্ন হলো,কোন ঈমানদারও কি সে বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকতে পারে?  ২৩/১১/১২